Thursday, August 19, 2010

পশ্চিম বঙ্গের কবি গৌতম চৌধুরী বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক মৌলবাদিদের সার্টিফিকেট কেন দিচ্ছেন? বিষয়টা কি??

গৌতম চৌধুরী কবি। তার বাড়ি পশ্চিবঙ্গে। তিনি আমাকে মেইল করেছেন। বলেছেন- রাও ফরমান আলী খান : ঠাণ্ডা মাথার খুনি নোটের একজায়গায় লিখেছেন - "কিভাবে দৈনিক নয়া দিগন্তে ফরহাদ মজহার নামক লোকজন লেখেন- আবহমান বাঙালি চেতনা একটি ফ্যাসীবাদি চেতনা। " - দয়া ক'রে যদি ফ.ম-র ওই লেখাটি পড়ান, কৃতজ্ঞ রইব।

আমি একাত্তরের গণহত্যার কাপালিক রাও ফরমান আলি খানকে নিয়ে একটি নোট লিখেছিলাম। রাও ফরমান আলিরা শুধু ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যা করেনি- তারা হাজার বছরের আবহমান বাঙালি জাতিকে ও চেতনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। এখনো তা শেষ হয়নি। নানাভাবে রাও ফরমান আলির চেলা চামুণ্ডারা এই কাজটি এখনো করে যাচ্ছে। ফরহাদ মজহার নামের কতিপয় জীবিত ভাঁড় এই কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কবি গৌতম চৌধুরী এটা বিশ্বাস করেননি। মনে করেছেন- আমি বোধহয় বানিয়ে বানিয়ে ‘অকথা-কুকথা’ বলেছি ফরহাদ মজহার সম্বন্ধে। তিনি বারবার আমাকে মেইল করে ফরহাদ মজহারের ওই লেখাটি চাচ্ছিলেন। আমার অত সময় নেই সবার অনুরোধ রক্ষা করার। কিন্তু গৌতম চৌধুরীর বারংবার অনুরোধে আমি লেখাটির লিংক পাঠালাম। এ সংক্রান্ত নানাজনের মন্তব্যের আরেকটি লিংকও তাকে দিলাম। তিনি সেটা পড়ে লিখলেন- ‘ফরহাদ মজহার হলেন জীবিত বাঙালি শ্রেষ্ঠ কবিদের মধ্যে একজন। ফরহাদ মজহার হলেন বিভাগোত্তর বাঙালি জাতির একজন শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ। সব বিষয়ে যে তাঁর সাথে সবাইকে সহমত হতে হবে, এমন মাথার দিব্যি কেউ দেয়নি। তবে তাঁর চিন্তাকাঠামোর মোকাবিলা করতে চাইলে তা তো করতে হবে চিন্তা দিয়েই। আকথা-কুকথা বলে উড়িয়ে দেবার মতো খড়কুটো তিনি নন ।’

ফরহাদ মজহারতো নিজেকে বাঙালি বলে স্বীকারই করেন না। তাকে কেন জীবিত বাঙালি শ্রেষ্ঠ কবিদের মধ্যে একজন বলছেন গৌতম চৌধুরী? ফরহাদ মজহার বাঙালি জাতীয়তাবাদকে ফ্যাসিবাদি হিসাবে স্পষ্টভাবে নির্দেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, 'বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ একনায়কতান্ত্রিক ক্ষমতা পরিগঠনের মধ্যে শুধু নয়, ছিল নৃতাত্ত্বিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধারণায়, তথাকথিত ‘সমাজতন্ত্রে’ এবং নিরন্তর এক যুদ্ধংদেহি মনোভঙ্গির চর্চায়। ফ্যাসিবাদ মজুদ ছিল আমাদের সেই সকল ধ্যান, ধারণা, আকাংক্ষা ও আবেগের মধ্যে যাকে আমরা কোন দিনই সন্দেহ করি নি, সন্দেহ করতে শিখি নি।' (৭ জুন, ২০০৮, দৈনিক নয়া দিগন্ত)। http://www.dailynayadiganta.com/2009/06/07/fullnews.asp?News_ID=149127&sec=6

তিনি লিখেছেন- ‘মুক্তিযুদ্ধ এখনো আমাদের অধিকাংশের কাছে দুই নৃতাত্ত্বিক সম্প্রদায় ‘বাঙালি’ বনাম ‘পাঞ্জাবি’র লড়াই।’ একাত্তরের পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীর বাঙালিদের অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করাকে তিনি ধিক্কার দিয়েছেন। বলেছেন- এই অস্ত্র ধারণের কারণে মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। ফরহাদের মতে- যুদ্ধের চেয়ে ‘একটি নির্যাতিত জনগোষ্ঠির প্রতি বে-ইনসাফি এবং নির্যাতিতের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ইত্যাদি রাজনৈতিক প্রশ্নই ছিল মুখ্য’। অস্ত্রের চেয়ে তার মতে ‘নৈতিক শক্তিটাকে বড় করে দেখা দরকার ছিল’। কী মনে হয়- গান্ধী কথা বলছেন!!

প্রশ্ন হল- ফরহাদ মজহার ষাট দশকের সময় থেকে গান্ধিজীর অহিংস পাঠশালায় ভর্তি হননি। গলাকাটা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার নেতা সিরাজ সিকদার একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও ফরহাদ মজহার তার বিরোধীতা করেন। তখন তিনি কোথায় ছিলেন? কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগানে? সেখানে তাকে দেখা যায়নি। দেশ স্বাধীনের পরে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক বিপ্লবী হুমায়ূন কবীরের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। তার গুরু আহমদ ছফা তার ডাইরীতে একথা বলে গিয়েছিলেন ষ্পষ্টভাষায়- নূরুল আনোয়ারের সম্পাদনায় ২০০৪ সালে আহমদ ছফার ডায়েরি নামে একটা বইতে ছফা সাহেব লিখেছেন--
"ভাত খেলাম। কাপড় ধুয়ে দিলাম। ঘুমোলাম। মনওয়ার এবং মসি এসে জাগালো। মসি ছেলেটাকে আমি ভয়ঙ্কর অপছন্দ করি। মনে হয় ছেলেটা কি একটা মতলবে ঘুরছে। আমার ধারণা হুমায়ুনের মৃত্যুরহস্যটা সে জানে। দিনে দিনে এ ধারণাটা আমার মনে পরিষ্কার রূপ লাভ করছে। কেমন জানি মনে হয়, ছেলেটার হাতে রক্তের দাগ লেগে আছে। এ ধরনের ছেলেদের কি করে এড়িয়ে চলবো সেটা একটা সমস্যা। রেবুদের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে সম্ভবত। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত করতে পারিনি। আশা করছি এরই মধ্যে নতুন কোনো তথ্য জেনে যাবো। ফরহাদ মজহারের আমেরিকা পলায়ন, সালেহার সঙ্গে স্বামীর পুনর্মিলন এসবের সঙ্গে বোধ হয় হুমায়ুনের মৃত্যুর একটা সম্পর্ক জড়িত রয়েছে। লিংক- "http://www.facebook.com/note.php?note_id=94343956157&ref=mf
আহমদ ছফা আঁতকে উঠে এই গুরু মারা শিষ্য সম্পর্কে বলেছেন- ফরহাদ মজহার লোকটা সন্দেহজনক।

আমেরিকা পালিয়েছিলেন আরেক ছদ্মবেশী-সুবিধাবাদি সৈয়দ আলী আহসানের লেজ ধরে। সৈয়দ আলী আহসান সামরিক শাসক ও মৌলাবাদের চোঙ্গা ফুকাতেন। পাকস্তিান আমলে রবীন্দ্রবিরোধীতার পুরোধাঁ ছিলেন।

একাত্তরের পরাজিত শত্রু –ঘাতক জামায়াতে ইসলামী কিন্তু ফরহাদের এই কথাটাই বলে যে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ ছিল ভুল। ওটা ছিল ছিল ভায়ে ভায়ে দ্বন্দ্ব। ফরহাদ মজহার জামাতের কথাটা একটু আধুনিক ভাষায় কয়েছেন মাত্র। জামায়াত বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের শ্রষ্টা ও মদদদাতা। এই জঙ্গীরা যখন সারা দেশে বোমাবাজি করেছে- তখন জামায়াতের আমীর বললেন- এই বোমাবাজি আসলে র এবং মোশাদের কাজকারবার। তাকে যখন প্রশ্ন করা হল- এ তথ্য কোথায় পেয়েছেন ? তখন নিজামী সাহেব বলে দিলেন কমরেড ফরহাদ মজহার এটা লিখেছেন। জামায়াতের তথ্য প্রণেতা হলেন ফরহাদ মজহার! জঙ্গিদের কর্মকাণ্ডকে তিনি ‘সন্ত্রাসী’ বলতে নারাজ। সে সময় জঙ্গীরা বিচাররকদের বোমা মেরে হত্যা করেছে। আর ফরহাদ মজহার এই হত্যাকারীদের সাফাই গেয়ে লিখেছেন- ‘নিজেদের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করবার যে কোন লড়াই-সংগ্রামকে এখন অনায়াসেই ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ড হিশাবে আখ্যায়িত করা সহজ। আমরা তো চোখের সামনেই দেখছি আদালত মানুষের মানবাধিকার রক্ষা করছে না।’

বিগত নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সারা দেশে প্রবল জনমত গড়ে ওঠে। সে সময় ফরহাদ মজহার ছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোটের নির্বাচনী প্রচারের কর্মকর্তা। জঙ্গীবাদি সংগঠন হিজবুত তাহরীর একজন নেতা হলেন এই ‘সর্ব শ্রেষ্ঠ জীবিত বাঙালি কবি ফরহাদ মজহার। হিজবুৎ তাহরী এখন বাংলাদেশে একটি নিষিদ্ধ সংগঠন। জামায়াতের পত্রিকা দৈনিক নয়া দিগন্তের নিয়নিত লেখক হলেন ফরহাদ মজহার।

আর চিন্তাবিদ? রবীন্দ্রনাথকে অতিশয় হিন্দু এবং জমিদার বলে গালিগালাজ দিয়ে নিজেই রবীন্দ্র মজহার হতে গিয়ে ফেইল। কেউ তাকে পোছে না। তাই রেগে মেগে হতাশ হয়ে বললেন, নাহ, রবীন্দ্রনাথকে এড়ানো গেল না। তারপর তিনি লালন শাহকে রবীন্দ্রনাথের বিপরীতে দাঁড় করানোর চেষ্টা করলেন। করে নিজেই জীবিত সুফি উপাধি ধারণ করলেন। আর তার দল হিজবুত তাহরির যখন লালন ভাস্কর্য ভাঙতে লেগে গেল তখন এই সুফি চিন্তাবিদ টু শব্দটি করলেন না। বললেন, লালন ছিলেন কুতার্কিক। এই হল চিন্তার শ্রেষ্ঠ চিন্তার নমুণা।

ফরহাদ মজহারকে নিয়ে যত কম কথা বলা যায় ততই মঙ্গল। তার রয়েছে মৌলবাদিদের টাকা, জামায়াত-বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতা, এনজিওর নামে মেরে দেওয়া বিদেশী অর্থ, বিপুল ব্যবসা বানিজ্য এবং গাড়ি-বাড়ি-নারী…। এবং কতিপয় ভাড়াতে পেশীবাজি মাস্তান-লেখক। এবং আন্তর্জাতিক কানেকশন। অধুনা পশ্চিম বঙ্গেও এরকম একটি কানেকশন তিনি দাঁড় করিয়েছেন বলে শোনা যায়।

ফরহাদের দায়িত্ব হল- তরুণ বুদ্ধিজীবীদের মগজ ধোলাই করা। তাদেরকে বলা যে-‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করা, একদলীয় শাসন কায়েম ইত্যাদি নানান রাজনৈতিক নির্যাতন ও নিবর্তনমূলক শাসনের কারণে বাকশালী আমল ফ্যাসিবাদী আমল বলে গণ্য হয়।‘ বাকশাল বলতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকেও নির্দেশ করেন। বাকশাল বলাটা তার বাককৌশল। তার ভয়াবহতম প্রকল্প হল- বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানী ধারণায় সাম্প্রদায়িকীকরণ। জনাব ব্রাত্য রাইসু এন্ড গং প্রত্যক্ষভাবে এই দায়িত্ব পালন করছেন। ফরহাদ তরুণ প্রজন্মকে জামায়াতের প্রতি সহানুবূতিশীল করেগড়ে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখান দেখা যাচ্ছে- তরুণ প্রজন্ম তাকে বুড়োর আঙুল দেখিয়ে দিয়েছে। জনগণ তার আদর্শের দল জামায়াত-বিএনপি'কে বিদায় করে দিয়েছে।

তাহলে পশ্চিম বঙ্গের কবি গৌতম চৌধুরী এইসব না জেনেই বলে ফেললেন- ‘ফরহাদ মজহার হলেন জীবিত বাঙালি শ্রেষ্ঠ কবিদের মধ্যে একজন। ফরহাদ মজহার হলেন বিভাগোত্তর বাঙালি জাতির একজন শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ’। বিষয়টা কি?
এক বন্ধু শুনে বললেন- ফরহাদ মজহার কবি! তাঁর কবিতা কে পড়ে এই বাংলাদেশে? তার কবিতা কি শ্রেষ্ঠ মানের কবিতা এবং জনপ্রিয় কবিতা? উত্তর শুনে পুরান ঢাকার ঘোড়াও হেসে উঠবে।

এখন গৌতম চৌধুরী এই একাত্তরের খুনীদের মুখোশ ফরহাদ মজহারকে শ্রেষ্ঠত্বের সার্টিফিকেট কেন দিলেন? পারলে ফরহাদ মজহারতো তার ঈমানী বাহিনী নিয়ে পশ্চিম বঙ্গের দাদাদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। আর তার পক্ষে গৌতম চৌধুরী! ফেসবুকে দেখেছি- গৌতম চৌধুরী পশ্চিম বঙ্গের এক কবির কবিতার পোস্ট দিয়েছেন। এর আগে তার নাম শুনিনি। না শোনাটা আমার অন্যায় নয়। পাঠক হিসাবে আমি দুর্বল। কিছুদিন আগে কবি রণজিৎ দাশ ফরহাদ মজহারের অন্যতম স্বজন সাজ্জাদ শরীফের সঙ্গে ফরহাদীয় শ্রেষ্ঠ কবিতা সংকলন করেছেন। কবি জয়দেব বসু জানুয়ারি মাসে সগৌতম চৌধুরী বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছেন। তাদেরকে বাংলাদেশে নিয়ে গিয়েছিলেন অগ্রবীজের অন্যতম সম্পাদক মার্কিন মুলুকের সৌম্য দাশগুপ্ত। ভিডিওতে দেখেছি কবি ফরিদ কবিরের সঙ্গে আছেন গৌতম চৌধুরী। ফরিদ কবির সাজ্জাদ শরীফের আপন ভাই। ফরহাদ মজহারের লোকজনের সঙ্গে বাংলাদেশে তারা ফরহাদীয় নানা কিসিমের আয়োজনে ছিলেন। থাকুন- এটা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু যখন এরা ছদ্ম বুদ্ধিজীবী মৌলবাদিদের সার্টিফিকেট দেন- তখন কিন্তু মাথা ব্যথা হয়। মাথার ভিতরে সেই পুরানো পাখি বলে ওঠে- এরা ভাড়াটে। এদের অনেকেই পশ্চিম বঙ্গে আছেন অভাবে-স্বভাবে। বাংলাদেশের কেউ ইশারা করলেই নাচতে নাচতে তারা এসে পড়ছেন। বাহ্যজ্ঞান শুন্য দশায় যা বলতে বলছে তাদের ভাড়াকারী বুদ্ধিবৃত্তিক মৌলবাদিচক্র- তারা তা অবলীলায় হড়বড় করে উগরে দিচ্ছেন।

কী বলেন পশ্চিম বঙ্গের কবি গৌতম চৌধুরী?

1 comment:

  1. Mujib Bhai, Ami Apnar Sange Achhi. Goutam choudhurira
    Thakbei, Ignore Karun.

    ReplyDelete