না গল্প, না উপন্যাস, না কবিতা।
প্লেনের মাল-টানা-চালানের
একটা মাত্র পৃষ্ঠা;
একশ ৩০ কেজি ওজন
হারাইছে টেলিভিশনে ভালো লাগা
বিদেশি রাস্তাঘাট আর
মানুষগুলিকে ঈর্ষা;
২.
কেজিতে দেড়শ ডলার
ওজন মেপে তোমার
দেশে ফেরত আসা
কফিন, সঙ্গে লাশ-
টাকাপয়সা কবিতাকলার দূরের জিনিস
মানুষ মরে মরে যায় দূরে দূরে
যায় টাকার দরকারে;
আমরা তো শিল্প করতেছি-
বিমূর্ত মুর্খ সব বাস্তবতা
৩.
মানুষ ঘাস খায়, ঘাস পড়ে
তাই শুনে খুশি হই
“তোমার হৃদয় আজকে ঘাস”
টাকাও মানুষের দরকার!
থাক, বলে যাবে মন্ত্রী
আর বিষয়ের মাষ্টার
৪.
তোমরা তো আসতেছো শিল্প করবে
এখানে না গল্প, না উপন্যাস, না কবিতা
শুধু প্লেনের মাল-টানা-চালানের
সম্মতির একটা পৃষ্ঠা
Monday, March 29, 2010
Thursday, March 18, 2010
কবি টি এম আহমেদ কায়সার এর গুচ্ছকবিতা
ঘুম
ভাবছি, এই ভাঙা চোয়াল আর কুজো কাধ নিয়ে
আর ঘর থেকে বাইরে বেরোব না
টেলিফোনের তার কেটে দেবো
বরফ মাড়ানো জুতোগুলো কালো বিন-ব্যাগে ভরে
রাস্তায় স্ক্র্যাপভ্যানে রেখে আসবো
আমার চিবুকে যে বাজপাখির ছায়া দেখে এক উদ্ভ্রান্ত কিশোরী
সহসা আতকে উঠেছিলো
ভাবছি, বরং সেই ছায়ার সাথে তলোয়ার হাতে
নেমে পড়বো এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে
আর আমার রক্তের অন্ধকার থেকে ঝাক ঝাক বুনো-শালিখ উড়ে যেতে দেখে
মনে পড়ে
কলাশাস্ত্রে এক অভিজ্ঞ রমনী আমাকে শিখিয়েছিলনে পাখি ধরার দুর্দান্ত কৌশল
তার কথা ভেবে ভেবে কি আমি গোপনে কিছু কাশফুল বিসর্জন দেবো এখোন?
ভাবছি আর বাইরে বেরুবো না
বাতিগুলি নিভিয়ে দেবো অলক্ষ্যে
আর দূর বরফ পাহাড় থেকে বিটোভেন যে ভূজঙ্গ তীরগুলো ছুড়ে দেন নিঃশব্দে
হৃতপিন্ডে সেই তীরগুলোর দগদগে ক্ষতচিহ্ন নিয়ে
আমি বরং ঘুমোতে যাবো; নিভৃতে ঘুমিয়ে যাবো গভীর রাত্তিরে
হিংসা
কে যেন হিংসাভরে বন্দরের আলোগুলো নিভিয়ে দিয়েছে
সমুদ্রে শিকার রেখে একা একা ফিরে যাচ্ছি, আহা! ...
তবু দেখো, ফের জাগে শিকারের মোহ;
অশ্ব-ঘঙুর শুনি কোনো এক দূরতম দ্বীপে!
রক্ত-বুদ্বুদ
আমি যেনো হোলি খেলার মাঠে
সব ভুলে
কোনোএক প্রাচীন শীতভোরে কুয়াশাভেজা নিঃসঙ্গ পাটকাঠি হাতে
কেবলি রক্ত বুদ্বুদ তুলে চলছি
কেবলি রক্ত বুদ্বুদ তুলে চলছি
আর নিস্তব্ধ নুড়ি পাথরগুলো আমার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক
আর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে আগুন, সন্ত্রাস নাকি রক্তের ফিনকি?
ফেরা
খোপায় এটেছো দেহ; অলকে বেধেছো হাত
বয়ঙ্ক আখির শর হেনেছো এ বুকে
কামের কোদন্ড ভুরু এবার কি ছোয়াবে দুচোখে?
কেনো যে ফেরাতে চাও? আমার তো রক্তে সখি
আবাল মাটির ডাক; অনন্ত গুহাব্রত, আমূল সন্ন্যাস
ঘুমন্ত নদী ও চন্দ্র, উড্ডীণ বালিহাস হাতছানি দেয় নিরবধি
জোছনায় নয় শোনো; অন্ধকারে মুখ ঢেকে রাখি
তবু বাধো লোকালয়ে; ওখানে কি পাবে সখি ডালে ডালে পাতার প্রপাত?
ওখানে কি পাবে নদী নির্জনে বয়ে গেছে ধু ধু?
ওখানে কি পাবে ছায়া কেপে উঠে কলোচ্ছল জলে?
ডেকে যায় বুনো-অশ্ব; লিলুয়া পবন ধীরে কড়া নেড়ে যায়
পালাতে গেলেই বিধে তোমার নোঙ্গর
ঝরে রক্ত পথে পথে; ওড়ে ঘুড়ি গাঢ় বেদনায়
সভ্যতা ছিড়িবো দোহে; আদিম অরণ্যমূলে ফিরে যেতে চাই
পাথরে পাথর ঠুকে পরিশুদ্ধ হতে চাই পুনঃ
তোমার বিনম্র ওষ্ঠে পাপিষ্ঠ রক্তের ধুলো মুছে নিতে চাই
ক্রমশ পারদ-স্তর ঢেকেছে এ শরীরের দ্যুতি
...প্রেমে ও বৈরাগ্যে খুজি গৌতমের প্রত্ন-প্রতীতী
ভাবছি, এই ভাঙা চোয়াল আর কুজো কাধ নিয়ে
আর ঘর থেকে বাইরে বেরোব না
টেলিফোনের তার কেটে দেবো
বরফ মাড়ানো জুতোগুলো কালো বিন-ব্যাগে ভরে
রাস্তায় স্ক্র্যাপভ্যানে রেখে আসবো
আমার চিবুকে যে বাজপাখির ছায়া দেখে এক উদ্ভ্রান্ত কিশোরী
সহসা আতকে উঠেছিলো
ভাবছি, বরং সেই ছায়ার সাথে তলোয়ার হাতে
নেমে পড়বো এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে
আর আমার রক্তের অন্ধকার থেকে ঝাক ঝাক বুনো-শালিখ উড়ে যেতে দেখে
মনে পড়ে
কলাশাস্ত্রে এক অভিজ্ঞ রমনী আমাকে শিখিয়েছিলনে পাখি ধরার দুর্দান্ত কৌশল
তার কথা ভেবে ভেবে কি আমি গোপনে কিছু কাশফুল বিসর্জন দেবো এখোন?
ভাবছি আর বাইরে বেরুবো না
বাতিগুলি নিভিয়ে দেবো অলক্ষ্যে
আর দূর বরফ পাহাড় থেকে বিটোভেন যে ভূজঙ্গ তীরগুলো ছুড়ে দেন নিঃশব্দে
হৃতপিন্ডে সেই তীরগুলোর দগদগে ক্ষতচিহ্ন নিয়ে
আমি বরং ঘুমোতে যাবো; নিভৃতে ঘুমিয়ে যাবো গভীর রাত্তিরে
হিংসা
কে যেন হিংসাভরে বন্দরের আলোগুলো নিভিয়ে দিয়েছে
সমুদ্রে শিকার রেখে একা একা ফিরে যাচ্ছি, আহা! ...
তবু দেখো, ফের জাগে শিকারের মোহ;
অশ্ব-ঘঙুর শুনি কোনো এক দূরতম দ্বীপে!
রক্ত-বুদ্বুদ
আমি যেনো হোলি খেলার মাঠে
সব ভুলে
কোনোএক প্রাচীন শীতভোরে কুয়াশাভেজা নিঃসঙ্গ পাটকাঠি হাতে
কেবলি রক্ত বুদ্বুদ তুলে চলছি
কেবলি রক্ত বুদ্বুদ তুলে চলছি
আর নিস্তব্ধ নুড়ি পাথরগুলো আমার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক
আর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে আগুন, সন্ত্রাস নাকি রক্তের ফিনকি?
ফেরা
খোপায় এটেছো দেহ; অলকে বেধেছো হাত
বয়ঙ্ক আখির শর হেনেছো এ বুকে
কামের কোদন্ড ভুরু এবার কি ছোয়াবে দুচোখে?
কেনো যে ফেরাতে চাও? আমার তো রক্তে সখি
আবাল মাটির ডাক; অনন্ত গুহাব্রত, আমূল সন্ন্যাস
ঘুমন্ত নদী ও চন্দ্র, উড্ডীণ বালিহাস হাতছানি দেয় নিরবধি
জোছনায় নয় শোনো; অন্ধকারে মুখ ঢেকে রাখি
তবু বাধো লোকালয়ে; ওখানে কি পাবে সখি ডালে ডালে পাতার প্রপাত?
ওখানে কি পাবে নদী নির্জনে বয়ে গেছে ধু ধু?
ওখানে কি পাবে ছায়া কেপে উঠে কলোচ্ছল জলে?
ডেকে যায় বুনো-অশ্ব; লিলুয়া পবন ধীরে কড়া নেড়ে যায়
পালাতে গেলেই বিধে তোমার নোঙ্গর
ঝরে রক্ত পথে পথে; ওড়ে ঘুড়ি গাঢ় বেদনায়
সভ্যতা ছিড়িবো দোহে; আদিম অরণ্যমূলে ফিরে যেতে চাই
পাথরে পাথর ঠুকে পরিশুদ্ধ হতে চাই পুনঃ
তোমার বিনম্র ওষ্ঠে পাপিষ্ঠ রক্তের ধুলো মুছে নিতে চাই
ক্রমশ পারদ-স্তর ঢেকেছে এ শরীরের দ্যুতি
...প্রেমে ও বৈরাগ্যে খুজি গৌতমের প্রত্ন-প্রতীতী
নির্মল হালদার ও আমাদের অস্বস্তি
মোস্তাক আহমাদ দীন
মানুষের জীবনের অন্যতম ট্র্যাজিক দিক হলো সে তার নগ্ন অতীতকে ভুলে যায়; আর এই ভুলে যাওয়াটুকু তার মধ্যে এমনই এক গুমান এনে দেয়— সে নিজেকে স্বয়ম্ভূ বা অযোনিজ জ্ঞান করে বসে। ব্যাপারটা ট্র্যাজিক হতো না, যদি-না এই ভুলে যাওয়াটুকু অন্যের উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে থাকত। আমাদের অকালবোধন-সমাজে কেউ-কেউ তো আবার জাতিস্মর-ত্রিকালদর্শী। তারা অবাক হন আর ভাবেন— এ- যে এতে ফোঁসফাস করছে, সে তো গতকালও ন্যাংটো হয়ে ঘুরল আর ও-যে একটু-আধটু নাচে-কোঁদে আর উদয়শঙ্করকে বুড়ো আঙুল দেখায়, সে-তো পরশু একটু বানরের সঙ্গেও তাল মেলাতে পারেনি; আর ও-যে চিত্রকর যে-কি না সুলতান গণেশ পাইন-এর মধ্যে প্রচিন্তনের দৈন্য খোঁজে, সে কি আলটামিরা আর দোর্দোনে উপত্যকার গুহার ভেতরের অপূর্ব রেখাচিত্রাবলি দেখেছে?
আমরা ভুলে যাই; এবং এই বিস্মৃতি তেমন সমস্যারই সৃষ্টি করত না, যদি-না ত্রিকালদর্শীদের মতো কেউ-কেউ তার কথা ও কাজ নিয়ে এসে আঘাত করত। সে- কাজ হতে নির্মল হালদারের মতো কোনও কিশোরের, যে তার বস্তু-পরিপাশ্ব থেকে আবহ তুলে এনে, নিজের অন্তরটাকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে, সামনে যে হাড়-গাছ-লতা-আকাশ, তার সঙ্গে মিলিয়ে-মিশিয়ে এই রকম বাজনা বাজায় যে, প্রোক্ত ট্র্যাজিক চরিত্রগুলো চমকে ওঠে আর তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি হয়। পশুজীবনের সঙ্গে আমাদের যে-স্তরগত পার্থক্য ঠিক সেই আমরাই তৈরি করে তুলেছি- সেখানে যখন আঘাতটা লাগে তখন অস্বস্তিজনিত অনুভবটা জাগে; —ভীতি একটাই- যদি সেই স্তরটুকু খসে পড়ে অথবা কোনও বদ হাওয়া যদি উড়িয়ে নিয়ে যায়।
নির্মল হাওলাদার, জন্ম ১৯৫৪, সাকিন: এস সি সিন্হা রোড, পুরুলিয়া- এই যার বাহ্যিক পরিচয়, তাকে কেন কিশোরই বলা হলো, তা একটা বৈধ প্রশ্ন বটে; কিন্তু তার এই জন্ম তথ্যটি যদি কোনওভাবে না-আসত আমাদের কাছে, তা হলে তার কবিতানিহিত যে পরিচিয় তাতে একটি কিশোর হিসাবে তাকে অভিহিত করলে আশা করি কোনও আপত্তি উঠতো না। কারণ আমরা তো ইতিমধ্যে এই অভিজ্ঞতার মধ্য আসতে পেরেছি যে- কখনো-সখনো শিশু কিশোরদের নানাবিধ প্রশ্ন, পিতা-মাতা(গুরুজন)দের অস্বস্তিকর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন: তাদের কেউ হয়তো পারক্য-বোধে আক্রান্ত- ঠিক তখনই কোনও বইয়ে শব্দটি দেখে বা কোনও ‘মাধ্যম’-এ শুনে কিশোরটি বলল : বাবা, পরকীয়া মানে কী?... প্রশ্নটি তাদের চমকে দেয়... চোরের মন কি না।
আর নির্মল এমনই এক কিশোর, চার দিদির আদর-খেয়ে-বেড়ে ওঠা যার বালকবেলা— আমরা তার সম্পর্কে শুধু এরকম দুটো-একটো কথা জানতে পারি— নির্মল হঠাৎ অন্য কোনও জগত কি আকাশ থেকে নেমে এসে বলেছে :
আমি আমার মনের মৃতদেহ নিয়ে
এই শহরের রোদ পোহাই
বন্ধুদের ডেকে বলি
আমার জীবনে রোজ রবিবার
বাবুমশাই আমি নির্মল হাওলাদার
এখনও আমার কথায় কথায় গরুর শিং ঢুকিয়ে
হো হো করে হেসে উঠেছে রাখাল বালক
_________________বাবুমশাই আমি নির্মল হাওলাদার : শ্রেষ্ঠ কবিতা
আসলে বাবুমশাইদের কী জানাতে চাইছে নির্মলের কবিতার এই ক’টি পঙক্তি— তা যেমন ভাবিত করে তেমনই তার নিরাভরন ভাষাটিও সঙ্গে-সঙ্গে স্পর্শ করে, চমৎকৃত করে। তার এই ভাষাটি সম্পর্কে দেবারতি মিত্র বলেছেন : এই দিব্য চোখ কোথায় পেল নির্মল হাওলাদার। এত সহজ বিষয়বস্তুকেও কি করে এত আশ্চর্য প্রাণ দেয়? নির্মলের কবিতা পড়তে পড়তে কখনো মনে হয় এ যেন আমিও লিখতে পারতাম, কিন্তু কই পারিনাতো। যখন ভারী জটিল গ্রন্থের চোখে ধাঁধা,মাথা টনটন, তখন নির্মলের কবিতা পড়ে বাঁচি,সত্যের ছোঁয়া পাই।
এই সত্য কি কিশোরশোভন? হয়ত; — অথবা শুধু আমরা, যারা বেশ সাজিয়ে-গুছিয়ে প্রশিক্ষিত করে নিজেদের খুব এগোনো মনে করি- তারা দেখি আর কখনো-সখনো বিস্ময় বোধ করি এই ভেবে, যখন তারও কন্ঠে সময়েরই বয়স্য ভাষা ঝলসে ওঠে-ক্ষুধায় ক্ষুধায় ক্ষুধিত হোক তবেই তো ক্ষুধিত কবির প্রদর্শনী হবে/ বহুদিন পোশাকে, প্রতিষ্ঠায় আছে, এইবার নগ্নতা মনোহরী হোক/ওর মুখ ছুঁয়ে যাক ভিখারীর ভুখ, না হলে আমি শালা টেবিল উল্ঠে দেবো/ দুমাদ্দুম লাথি মারব প্রতিষ্ঠার মুখে, বলব:/ কবি তুই দুখী হ, দুখে আছে জনসাধারণ।
না হলে নির্মল হাওলাদার সাধারণত এরকম;
নগরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে লেখা
লেখা কি আমার?
কবিতাটি শেষ হচ্ছে এভাবে :
আমি আছি ঢেঁকির শব্দে গরুর গাড়ির শব্দে
আমি কেন যাব ঐ লেখার কাছে?
তখন এ মনে হতেই পারে যে নির্মল এই ভূবনে এসে দুর্ঘটনাক্রমে কিছু অক্ষর-বর্ণ-চিহ্ন পাঠ করে কোনোও-কোনও সময় নিজেও তার শিকার হয়ে চলেছেন। কিন্তু তা কি তার ইচ্ছের মধ্যে ছিল?... এখন কে না জানে যে আমাদের পরিপ্রেক্ষণের ক্ষমতা সেই জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে আত্মপরিচয়ের প্রশ্নে যে জাতীয়তার সাম্প্রতিক প্রসঙ্গটি উঠে আসে, তা এখন আর আমাদের কাছে হাস্যকর মনে হয় না! আমরা কী দ্রুত ভুলে যাচ্ছি তাদেরকে যারা ব্যক্তি মালিকানায় ব্যাপারটিকে এখন বুঝে-উঠতে পারে না-কেননা এই বিষয়টি আজও তাদের অভিজ্ঞতার অন্তর্গত হয়নি;—ফলে নির্মলের কবিতা যদি (এসবের কথা বাদ দিয়ে) মা-বাবার পরিচয়ই যে আমাদের একমাত্র পরিচয় নয় তা বলে, প্রকৃতি-গাছপালা-আলো-অন্ধকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অনিবার্যতার সেই আক্ষেপের জায়গাটুকুই খুঁজে পাব।... ফরহাদ মযহার আর-জন্মে কখনও গায়ক কখনও- নিরক্ষর হয়ে জন্মাবার আকাঙ্ক্ষা যে রাখেন তাতে, তাকে এই তথ্য-বাহুল্যের কালে অনেকভাবেই বিদ্ধ করা যাবে, হয়ত বলা যাবে আকাট রোমান্টিক অথবা ক্ষমতার ঊনত্বের প্রসঙ্গ তুলে পলায়নবাদীও বলা যাবে; কিন্তু একজন কালদর্শী মেধাবী মানুষ যখন এই আকঙ্ক্ষাটি ব্যক্ত করেন তখন তার অন্তরিত দর্শনিকতাটুকুও তো আমাদের বিচার্য বিষয় হতে পারে। তিনি তো হেগেল-মার্কস-গ্রামসি-লুকাচ-পড়ুয়া মানুষ-এক্ষেত্রে তার গ্লানিটা যে অক্ষরজড়িত, তা বোঝা গেল; কিন্তু সেই অনুযুক্ত অক্ষরের ধারন করা মর্মটা কী? তার বেদনাটাই বা কী? তা কি কথা/ স্মৃতির বেদনা-যা তার মূলের গোপন অংশটুকুকেও এমন ভাবে আক্রান্ত করে যায়... যা তিনি কক্ষনও চাননি? মনে হয়;— আর নির্মলের ক্ষেত্রে হয়েছিল কি, তার জন্মকালীন বোধটুকু পরে কে যেন বিভ্রান্ত করে তাকে জিজ্ঞাসার্ত করে তোলে—
মনে হয় শিকড়ই আমার শিরা হয়ে
আমাকে করেছে প্রবাহিত মানুষের দিকে। অথচ কে যেন বলল,
শিকড় খুঁজে নে
খুঁজতে খুঁজতে কংক্রিটের শহরে একদিন দেখি
শুকিয়ে যাচ্ছে আমার শিরা
শিকড় কি অন্য কিছু অন্য কোথাও ________________________________শিকড় : শ্রেষ্ট কবিতা
—ওই শিকড়ের প্রসঙ্গ উঠলে তো মাটি প্রসঙ্গও উঠে আসে- আবার, মাটির কথা উঠলে অনিবার্যভাবে চলে আসে মায়ের কথাও; এবং শিকড় যেহেতু শিরা হয়ে মানুষের দিকে প্রবাহিত তাই অন্য মানুষের মাটি-বিক্রয়ের মতো নিষ্ঠুরতম কাজের প্রতিবেদনটি তার কলমে উত্তমপুরুষে প্রকাশ না-হয়ে পারে না।মাটি বিক্রি করতে গেলে মনে হয়/ মাকে বিক্রি করছি... এবং মা-মাটির দাম এতেই নীচে যে— একঝুড়ি মাটির দাম আট আনা-এসবের কারণ, অস্তিত্ব, যন্ত্রণা ইত্যাদির খোঁজ করতে গিয়ে তার কবিতায় যে- প্রতিবেদনার প্রকাশ ঘটে, তার মধ্যে তার সামান্য অথচ অনিবার্য চাওয়া আছে যাতে খিদেকে খিদেই বলা যায়, আগুনকে আগুন। এই নগ্নভাষার কারবারি নির্মল- তবে, তার নগ্নতার সঙ্গে অন্যান্য কবি, বিশেষ করে সেই হিমেনেথ, যাকে নগ্ন কবিতার কারিগর হিসাবে অভিহিত করা হয়, তার সঙ্গে নির্মলের তফাৎ অনেক। সমালোচকেরা হিমেনেথের মধ্যে high spiritual Quality খুঁজে পেয়েছিলেন। নির্মলের কবিতায় তার ছিটে ফোঁটাও পাওয়া যাবে কি না— সে বিষয়ে যথেষ্ট শক পোষণ করা যায়। তার কবিতা বরং উপর্যুক্ত অনুষঙ্গের বিপরীতে প্রাত্যহিক বিষয়-আশয় এমনভাবে উঠে আসে— অবাক হয়ে ভাবতে হয় : এও তাহলে কবিতার বিষয় হতে পারে?
আসলে নির্মলের তাকানোর মধ্যে এমনই এক আপন, সহজ অথচ স্বতন্ত্র ছন্দ আছে যা অন্যেরা নানারকম ভাবে-চক্রে পড়ে ধীরে-ধীরে হারিয়ে ফেলে বা, হারিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়। তার দেখার মধ্যে শিশুর দেখনভঙ্গির একটা সাদৃশ্য আছে বলে মনে হয়-কারণ নির্মলও শিশুর মতো প্রকৃতির নানা কিছু দেখে যুগপৎ মুগ্ধ আর বিস্মিত হওয়ার তাকত রাখে। যেমন ‘পরিচয়’ কবিতায় তার একটি আনন্দ পাওয়ার কথা বলা আছে। আনন্দটা এই জন্য- একটি কাঞ্চনপাতার সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে। এখানে আমাদেরও শিশুবেলার কথা মনে পড়ে যেতে পারে যখন কোনও কিছু দেখে আনন্দের আর সীমসংখ্যা থাকত না; তারপরও সকলকেই কি তা দেখানো যেত? এত সময়ই-বা কার আছে? নির্মলের অবস্থাও তথৈবচ- তাই কাঞ্চনপাতা দেখে তার মুগ্ধতা তৈরি হলো তা ভাগাভাগি করবার জন্যে ঘরের কাছে গিয়ে দেখা গেল, ঘরের কেউই তার কথা শুনছে না, এমন-কী ঘরও না-শুধু একটি শিশু আমার সঙ্গে ছুটে ছুটে চলে কাঞ্চনপাতা দেখতে।
নির্মলের এই ধরণের কবিতাগুলো পাঠ করতে করতে কখনো কোনও শিশুর, কখনও-বা কোনও কিশোরের একাকীত্বের কথা মনে পড়ে যায়-যে আবার বেশ অভিমানীও বটে- তুমি উপড়ে আছ উপরেই থাকো/আমি উপর দিকে মুখ করে/কথা কইব না-অথচ হিসেব করলে নির্মল এখন প্রায় পঞ্চাশ। বিবাহিত কি না জানি না, সকার না বেকার তাও জানি না; তবে অরুণ সেনের বদৌলতে এটুকু জানি : নির্মল স্বাধীন কর্মহীন আকাঙ্ক্ষাহীন আর কাউকে না কাউকে ভালোবেসে, আড্ডা দিয়ে এ জীবনটা কাটিয়ে চলে যেতে প্রস্তুত।এমন-যে নির্মল হালদার, তার গভীরভাবে না পড়ে, তার সম্পর্কে এমন ধারণা যে-কেউ করে ফেলতে পারে যে, কবিতালেখায় তার বুঝি কোন প্রকারের সচেনতা নেই। এ-বিষয়ে অরুণ সেনের জবানি : কোন কোনো কবিতায় অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তিতে বা অতিসারল্যে দুশ্চিন্তা হয়, শুধু ওই স্বভাব নির্ভরতা তার কবিতাকে ব্যাহত করছে না তো? ঠিক সেই সময়ে হঠাৎ একগোছা কবিতা লিখে নির্মল সেই সংশয় দূর করে দেন। আপাতত বুঝিয়ে দেন, ওর কবিতায় ভবিষ্যৎ নিয়ে আপাতত মাথা না ঘামালেও চলবে। অরুণ সেন যে-সংশয়ের কথা উল্লেখ করেছেন সে-অভিজ্ঞতা এই দীনপাঠকেরও বহুবার হয়েছে, অন্যদেরও হয়েছে নিশ্চয়; কিন্তু নির্মলের মধ্যে কী এমন গোপন শক্তি রয়েছে যে-এতে কবিতাপাঠ-অভিজ্ঞতার পরেও কুলকিনারা খুঁজে-পাওয়াটা মুশকিল হয়ে ওঠে? কখনও মনে হয়, তারও বুঝি রয়েছে অন্যরকম গুহ্য সহাজিয়া সাধনা।
তবে এটুকু ভাবা যায় যে— তার আছে অনুভবের এক আলাহিদা ভুবন, যেখানে তার শব্দগুলো অন্যের অনুভব-অভিজ্ঞতার স্মৃতি যতটা-না মনে করিয়ে দেয়, তার চেয়ে বেশি মনে করিয়ে দেয় তার নিজের অনুভবের কথা। এই অনুভব আবার অপরকে ছুঁয়ে-ছুঁয়ে শেষপর্যন্ত স্পর্শবন্দি করে ফেলবার কিমত রাখে।... সুনীলের ‘সাদাপৃষ্টা তোমার সঙ্গে’ কবিতাগ্রন্থের ‘শিল্প-সমালোচক কবিতায়’ দু-তিন বছরের এত্তটুকুন মেয়েটি প্রত্যেকটি বস্তুকে সে তার নিজ-নিজ নাম দেয়; একদিন সে, তার মা মা বলে উঠতেই পাশের ফ্ল্যাটের লোকটি তাকে যখন বলল, কোথায় তোমার মা? সে মোনালিসার ছবির দিকে হাত তুলে জবাব দিয়েছিল ঐ যে। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অমর সৃষ্টি এই মোনালিসা যে মেয়েটির মা নয়, এমন সত্য কথাটি বলে কেউ কি তাঁকে অভিযুক্ত করবে? নির্মলের অনুভবমোড়ানো ভাবনাগুলোও যে হুবহু এরকম, তা নয়। তার ভাবনার নজির পাওয়া যাচ্ছে এভাবে- সম্পৃক্ত শব্দে একটা আঁশটে গন্ধ লেগে থাকে, সম্পৃক্ত শব্দে আসক্তিও এসে যায়, মগ্ন শব্দে এক স্নিগ্ধতা আছে, আমার মনে হয় বা, এক প্রেমিকের অসুখে প্রেমিকার শুশ্রূষা দেখতে পাই। হাসপাতালে সিস্টারের সেবা দেখি অথবা, পৃথিবী বললে গ্লোবটাকে দেখি, মানচিত্র দেখতে পাই। ধরণী বললে মা-ভূমির এক শান্ত গ্রামবাংলার নিসর্গ আমার কাছে দেখা দেয়। নির্মলের এই শব্দ-ভাবনা ব্যুৎপত্তিজনিত না অনুভবজনিত? এমন প্রশ্ন তুলে কেউ যদি তাকে আক্রমণ করেন তাতে তার নিরজর কতটা ভাবনা হবে জানি না— কেননা কখনো তার এমনও তো ভাবতে ইচ্ছে করে যে-ভুল উচ্চারণ করেও আমি যদি আমার বক্তব্য বুঝাতে পারি, তা হলে ক্ষতিই বা কি ভুল উচ্চারণে... তবে, আমাদের উচ্চারণ তো শুদ্ধ হওয়াই উচিত, তা না হলে ভাবপ্রকাশে কতটা ক্ষতি হবে জানি না, কিন্তু তাতে তো যথেষ্ট নৈরাজ্য সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা- এ বোধ আশা করি নির্মলেরও আছে। তারপরও এমন উক্তি কেন করা হয়? তা হয়ত এ জন্য যে-আমরা সহজেই ভুলে যাই ভাষাটা আদতে অনুভবেরই দ্যোতক-আমরা অনায়াসে পাণ্ডিত্য জাহির করতে গিয়ে উপলক্ষ্যটাকেই লক্ষ্য করে এ- রকম আস্ফালন শুরু করি যে তার মধ্যে একটি হাস্যকর মিথ্যে গরিমার প্রকাশ ঘটাতে থাকি। নির্মলের ‘দহন’ কবিতায় আছে আর আমার মনে হলো, তুমিও আমাকে পুড়াবে না/দগ্ধ করবে শুধু... এ স্থানে আমাদের ঐতিহ্যনিষ্ঠ জ্ঞানতো বলে, কাউকে দগ্ধ করলে বুঝে নিতে হবে তার আগে পোড়ানোর একটা অনুঘটনা ঘটেছে। নির্মলের এই কবিতাটি পাঠ করতে গিয়ে আমাদের আদিপঠন কি আদিজ্ঞানের কোনও অভিজ্ঞতা কাজে লাগল কি? নির্মল তার একটির পর একটি কবিতাবইয়ে এভাবে নানা রকম অস্বস্তির ফুল-কণ্টক ছড়িয়ে রাখেন আমাদের জন্যে। তার শ্রেষ্ঠ কবিতা জানুয়ারি ২০০০-এ বের হলো দে’জ থেকে- সেখানে সংকলিত হলো ১৩টি কবিতাবই; এরপর আদম থেকে ২০০১ এ পাতারা কাঁপে, তার পরে আরো কিছু বেরুল কি-না জানি না-তবে, শেষ বইটিও সংশয়— কাটাবার পক্ষে যথেষ্ট- এখানেও সভ্যতা-অসভ্যতা, স্বস্তি-অস্বস্তির নানা উপাদান, আছে দ্বৈধও; ওই বইটি থেকে একটি ধাঁধাপ্রকারের কবিতা তুলে নিচ্ছি, যেখান থেকে আমরা পাঠ করে বুঝে নেব, নির্মলের কবিতা যে সমালোচনা করে চলে, অস্বস্তি জাগায়-এখানে, তার কবিতাও সে রকম কোনও সুযোগ নিল কি না, নাকি শেষ দুটি পঙতিতে এসে আবারও সেই সমালোচনা :
বাসনা
(সুব্রত সোমেন ও অতনুর জন্য)
তুমি গান করছো
আর আমি গানকে ছোঁয়ার নামে
তোমাকে জড়িয়ে ধরছি।
তুমি জানো, গানকে ছোঁয়া যায় না।
তুমি কি জানো, গানকে ছোঁয়ার নামে
তোমাকে আলিঙ্গন করছি?
২.
তুমি অসভ্য বলবে না বলেই
তোমাকে জড়িয়ে ধরি
তুমি জানো, অসভ্য মানুষেরই ক্ষুধাতৃষ্ণা থাকে
তুমি জানো, সভ্যতা শেখায়
ক্ষুধাকে আড়াল করতে?
৩.
আমার বাসনা থেকে তুই, তুই আমার কে?
রক্ত তুই, আবহমান
মানুষের জীবনের অন্যতম ট্র্যাজিক দিক হলো সে তার নগ্ন অতীতকে ভুলে যায়; আর এই ভুলে যাওয়াটুকু তার মধ্যে এমনই এক গুমান এনে দেয়— সে নিজেকে স্বয়ম্ভূ বা অযোনিজ জ্ঞান করে বসে। ব্যাপারটা ট্র্যাজিক হতো না, যদি-না এই ভুলে যাওয়াটুকু অন্যের উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে থাকত। আমাদের অকালবোধন-সমাজে কেউ-কেউ তো আবার জাতিস্মর-ত্রিকালদর্শী। তারা অবাক হন আর ভাবেন— এ- যে এতে ফোঁসফাস করছে, সে তো গতকালও ন্যাংটো হয়ে ঘুরল আর ও-যে একটু-আধটু নাচে-কোঁদে আর উদয়শঙ্করকে বুড়ো আঙুল দেখায়, সে-তো পরশু একটু বানরের সঙ্গেও তাল মেলাতে পারেনি; আর ও-যে চিত্রকর যে-কি না সুলতান গণেশ পাইন-এর মধ্যে প্রচিন্তনের দৈন্য খোঁজে, সে কি আলটামিরা আর দোর্দোনে উপত্যকার গুহার ভেতরের অপূর্ব রেখাচিত্রাবলি দেখেছে?
আমরা ভুলে যাই; এবং এই বিস্মৃতি তেমন সমস্যারই সৃষ্টি করত না, যদি-না ত্রিকালদর্শীদের মতো কেউ-কেউ তার কথা ও কাজ নিয়ে এসে আঘাত করত। সে- কাজ হতে নির্মল হালদারের মতো কোনও কিশোরের, যে তার বস্তু-পরিপাশ্ব থেকে আবহ তুলে এনে, নিজের অন্তরটাকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে, সামনে যে হাড়-গাছ-লতা-আকাশ, তার সঙ্গে মিলিয়ে-মিশিয়ে এই রকম বাজনা বাজায় যে, প্রোক্ত ট্র্যাজিক চরিত্রগুলো চমকে ওঠে আর তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি হয়। পশুজীবনের সঙ্গে আমাদের যে-স্তরগত পার্থক্য ঠিক সেই আমরাই তৈরি করে তুলেছি- সেখানে যখন আঘাতটা লাগে তখন অস্বস্তিজনিত অনুভবটা জাগে; —ভীতি একটাই- যদি সেই স্তরটুকু খসে পড়ে অথবা কোনও বদ হাওয়া যদি উড়িয়ে নিয়ে যায়।
নির্মল হাওলাদার, জন্ম ১৯৫৪, সাকিন: এস সি সিন্হা রোড, পুরুলিয়া- এই যার বাহ্যিক পরিচয়, তাকে কেন কিশোরই বলা হলো, তা একটা বৈধ প্রশ্ন বটে; কিন্তু তার এই জন্ম তথ্যটি যদি কোনওভাবে না-আসত আমাদের কাছে, তা হলে তার কবিতানিহিত যে পরিচিয় তাতে একটি কিশোর হিসাবে তাকে অভিহিত করলে আশা করি কোনও আপত্তি উঠতো না। কারণ আমরা তো ইতিমধ্যে এই অভিজ্ঞতার মধ্য আসতে পেরেছি যে- কখনো-সখনো শিশু কিশোরদের নানাবিধ প্রশ্ন, পিতা-মাতা(গুরুজন)দের অস্বস্তিকর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন: তাদের কেউ হয়তো পারক্য-বোধে আক্রান্ত- ঠিক তখনই কোনও বইয়ে শব্দটি দেখে বা কোনও ‘মাধ্যম’-এ শুনে কিশোরটি বলল : বাবা, পরকীয়া মানে কী?... প্রশ্নটি তাদের চমকে দেয়... চোরের মন কি না।
আর নির্মল এমনই এক কিশোর, চার দিদির আদর-খেয়ে-বেড়ে ওঠা যার বালকবেলা— আমরা তার সম্পর্কে শুধু এরকম দুটো-একটো কথা জানতে পারি— নির্মল হঠাৎ অন্য কোনও জগত কি আকাশ থেকে নেমে এসে বলেছে :
আমি আমার মনের মৃতদেহ নিয়ে
এই শহরের রোদ পোহাই
বন্ধুদের ডেকে বলি
আমার জীবনে রোজ রবিবার
বাবুমশাই আমি নির্মল হাওলাদার
এখনও আমার কথায় কথায় গরুর শিং ঢুকিয়ে
হো হো করে হেসে উঠেছে রাখাল বালক
_________________বাবুমশাই আমি নির্মল হাওলাদার : শ্রেষ্ঠ কবিতা
আসলে বাবুমশাইদের কী জানাতে চাইছে নির্মলের কবিতার এই ক’টি পঙক্তি— তা যেমন ভাবিত করে তেমনই তার নিরাভরন ভাষাটিও সঙ্গে-সঙ্গে স্পর্শ করে, চমৎকৃত করে। তার এই ভাষাটি সম্পর্কে দেবারতি মিত্র বলেছেন : এই দিব্য চোখ কোথায় পেল নির্মল হাওলাদার। এত সহজ বিষয়বস্তুকেও কি করে এত আশ্চর্য প্রাণ দেয়? নির্মলের কবিতা পড়তে পড়তে কখনো মনে হয় এ যেন আমিও লিখতে পারতাম, কিন্তু কই পারিনাতো। যখন ভারী জটিল গ্রন্থের চোখে ধাঁধা,মাথা টনটন, তখন নির্মলের কবিতা পড়ে বাঁচি,সত্যের ছোঁয়া পাই।
এই সত্য কি কিশোরশোভন? হয়ত; — অথবা শুধু আমরা, যারা বেশ সাজিয়ে-গুছিয়ে প্রশিক্ষিত করে নিজেদের খুব এগোনো মনে করি- তারা দেখি আর কখনো-সখনো বিস্ময় বোধ করি এই ভেবে, যখন তারও কন্ঠে সময়েরই বয়স্য ভাষা ঝলসে ওঠে-ক্ষুধায় ক্ষুধায় ক্ষুধিত হোক তবেই তো ক্ষুধিত কবির প্রদর্শনী হবে/ বহুদিন পোশাকে, প্রতিষ্ঠায় আছে, এইবার নগ্নতা মনোহরী হোক/ওর মুখ ছুঁয়ে যাক ভিখারীর ভুখ, না হলে আমি শালা টেবিল উল্ঠে দেবো/ দুমাদ্দুম লাথি মারব প্রতিষ্ঠার মুখে, বলব:/ কবি তুই দুখী হ, দুখে আছে জনসাধারণ।
না হলে নির্মল হাওলাদার সাধারণত এরকম;
নগরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে লেখা
লেখা কি আমার?
কবিতাটি শেষ হচ্ছে এভাবে :
আমি আছি ঢেঁকির শব্দে গরুর গাড়ির শব্দে
আমি কেন যাব ঐ লেখার কাছে?
তখন এ মনে হতেই পারে যে নির্মল এই ভূবনে এসে দুর্ঘটনাক্রমে কিছু অক্ষর-বর্ণ-চিহ্ন পাঠ করে কোনোও-কোনও সময় নিজেও তার শিকার হয়ে চলেছেন। কিন্তু তা কি তার ইচ্ছের মধ্যে ছিল?... এখন কে না জানে যে আমাদের পরিপ্রেক্ষণের ক্ষমতা সেই জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে আত্মপরিচয়ের প্রশ্নে যে জাতীয়তার সাম্প্রতিক প্রসঙ্গটি উঠে আসে, তা এখন আর আমাদের কাছে হাস্যকর মনে হয় না! আমরা কী দ্রুত ভুলে যাচ্ছি তাদেরকে যারা ব্যক্তি মালিকানায় ব্যাপারটিকে এখন বুঝে-উঠতে পারে না-কেননা এই বিষয়টি আজও তাদের অভিজ্ঞতার অন্তর্গত হয়নি;—ফলে নির্মলের কবিতা যদি (এসবের কথা বাদ দিয়ে) মা-বাবার পরিচয়ই যে আমাদের একমাত্র পরিচয় নয় তা বলে, প্রকৃতি-গাছপালা-আলো-অন্ধকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অনিবার্যতার সেই আক্ষেপের জায়গাটুকুই খুঁজে পাব।... ফরহাদ মযহার আর-জন্মে কখনও গায়ক কখনও- নিরক্ষর হয়ে জন্মাবার আকাঙ্ক্ষা যে রাখেন তাতে, তাকে এই তথ্য-বাহুল্যের কালে অনেকভাবেই বিদ্ধ করা যাবে, হয়ত বলা যাবে আকাট রোমান্টিক অথবা ক্ষমতার ঊনত্বের প্রসঙ্গ তুলে পলায়নবাদীও বলা যাবে; কিন্তু একজন কালদর্শী মেধাবী মানুষ যখন এই আকঙ্ক্ষাটি ব্যক্ত করেন তখন তার অন্তরিত দর্শনিকতাটুকুও তো আমাদের বিচার্য বিষয় হতে পারে। তিনি তো হেগেল-মার্কস-গ্রামসি-লুকাচ-পড়ুয়া মানুষ-এক্ষেত্রে তার গ্লানিটা যে অক্ষরজড়িত, তা বোঝা গেল; কিন্তু সেই অনুযুক্ত অক্ষরের ধারন করা মর্মটা কী? তার বেদনাটাই বা কী? তা কি কথা/ স্মৃতির বেদনা-যা তার মূলের গোপন অংশটুকুকেও এমন ভাবে আক্রান্ত করে যায়... যা তিনি কক্ষনও চাননি? মনে হয়;— আর নির্মলের ক্ষেত্রে হয়েছিল কি, তার জন্মকালীন বোধটুকু পরে কে যেন বিভ্রান্ত করে তাকে জিজ্ঞাসার্ত করে তোলে—
মনে হয় শিকড়ই আমার শিরা হয়ে
আমাকে করেছে প্রবাহিত মানুষের দিকে। অথচ কে যেন বলল,
শিকড় খুঁজে নে
খুঁজতে খুঁজতে কংক্রিটের শহরে একদিন দেখি
শুকিয়ে যাচ্ছে আমার শিরা
শিকড় কি অন্য কিছু অন্য কোথাও ________________________________শিকড় : শ্রেষ্ট কবিতা
—ওই শিকড়ের প্রসঙ্গ উঠলে তো মাটি প্রসঙ্গও উঠে আসে- আবার, মাটির কথা উঠলে অনিবার্যভাবে চলে আসে মায়ের কথাও; এবং শিকড় যেহেতু শিরা হয়ে মানুষের দিকে প্রবাহিত তাই অন্য মানুষের মাটি-বিক্রয়ের মতো নিষ্ঠুরতম কাজের প্রতিবেদনটি তার কলমে উত্তমপুরুষে প্রকাশ না-হয়ে পারে না।মাটি বিক্রি করতে গেলে মনে হয়/ মাকে বিক্রি করছি... এবং মা-মাটির দাম এতেই নীচে যে— একঝুড়ি মাটির দাম আট আনা-এসবের কারণ, অস্তিত্ব, যন্ত্রণা ইত্যাদির খোঁজ করতে গিয়ে তার কবিতায় যে- প্রতিবেদনার প্রকাশ ঘটে, তার মধ্যে তার সামান্য অথচ অনিবার্য চাওয়া আছে যাতে খিদেকে খিদেই বলা যায়, আগুনকে আগুন। এই নগ্নভাষার কারবারি নির্মল- তবে, তার নগ্নতার সঙ্গে অন্যান্য কবি, বিশেষ করে সেই হিমেনেথ, যাকে নগ্ন কবিতার কারিগর হিসাবে অভিহিত করা হয়, তার সঙ্গে নির্মলের তফাৎ অনেক। সমালোচকেরা হিমেনেথের মধ্যে high spiritual Quality খুঁজে পেয়েছিলেন। নির্মলের কবিতায় তার ছিটে ফোঁটাও পাওয়া যাবে কি না— সে বিষয়ে যথেষ্ট শক পোষণ করা যায়। তার কবিতা বরং উপর্যুক্ত অনুষঙ্গের বিপরীতে প্রাত্যহিক বিষয়-আশয় এমনভাবে উঠে আসে— অবাক হয়ে ভাবতে হয় : এও তাহলে কবিতার বিষয় হতে পারে?
আসলে নির্মলের তাকানোর মধ্যে এমনই এক আপন, সহজ অথচ স্বতন্ত্র ছন্দ আছে যা অন্যেরা নানারকম ভাবে-চক্রে পড়ে ধীরে-ধীরে হারিয়ে ফেলে বা, হারিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়। তার দেখার মধ্যে শিশুর দেখনভঙ্গির একটা সাদৃশ্য আছে বলে মনে হয়-কারণ নির্মলও শিশুর মতো প্রকৃতির নানা কিছু দেখে যুগপৎ মুগ্ধ আর বিস্মিত হওয়ার তাকত রাখে। যেমন ‘পরিচয়’ কবিতায় তার একটি আনন্দ পাওয়ার কথা বলা আছে। আনন্দটা এই জন্য- একটি কাঞ্চনপাতার সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে। এখানে আমাদেরও শিশুবেলার কথা মনে পড়ে যেতে পারে যখন কোনও কিছু দেখে আনন্দের আর সীমসংখ্যা থাকত না; তারপরও সকলকেই কি তা দেখানো যেত? এত সময়ই-বা কার আছে? নির্মলের অবস্থাও তথৈবচ- তাই কাঞ্চনপাতা দেখে তার মুগ্ধতা তৈরি হলো তা ভাগাভাগি করবার জন্যে ঘরের কাছে গিয়ে দেখা গেল, ঘরের কেউই তার কথা শুনছে না, এমন-কী ঘরও না-শুধু একটি শিশু আমার সঙ্গে ছুটে ছুটে চলে কাঞ্চনপাতা দেখতে।
নির্মলের এই ধরণের কবিতাগুলো পাঠ করতে করতে কখনো কোনও শিশুর, কখনও-বা কোনও কিশোরের একাকীত্বের কথা মনে পড়ে যায়-যে আবার বেশ অভিমানীও বটে- তুমি উপড়ে আছ উপরেই থাকো/আমি উপর দিকে মুখ করে/কথা কইব না-অথচ হিসেব করলে নির্মল এখন প্রায় পঞ্চাশ। বিবাহিত কি না জানি না, সকার না বেকার তাও জানি না; তবে অরুণ সেনের বদৌলতে এটুকু জানি : নির্মল স্বাধীন কর্মহীন আকাঙ্ক্ষাহীন আর কাউকে না কাউকে ভালোবেসে, আড্ডা দিয়ে এ জীবনটা কাটিয়ে চলে যেতে প্রস্তুত।এমন-যে নির্মল হালদার, তার গভীরভাবে না পড়ে, তার সম্পর্কে এমন ধারণা যে-কেউ করে ফেলতে পারে যে, কবিতালেখায় তার বুঝি কোন প্রকারের সচেনতা নেই। এ-বিষয়ে অরুণ সেনের জবানি : কোন কোনো কবিতায় অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তিতে বা অতিসারল্যে দুশ্চিন্তা হয়, শুধু ওই স্বভাব নির্ভরতা তার কবিতাকে ব্যাহত করছে না তো? ঠিক সেই সময়ে হঠাৎ একগোছা কবিতা লিখে নির্মল সেই সংশয় দূর করে দেন। আপাতত বুঝিয়ে দেন, ওর কবিতায় ভবিষ্যৎ নিয়ে আপাতত মাথা না ঘামালেও চলবে। অরুণ সেন যে-সংশয়ের কথা উল্লেখ করেছেন সে-অভিজ্ঞতা এই দীনপাঠকেরও বহুবার হয়েছে, অন্যদেরও হয়েছে নিশ্চয়; কিন্তু নির্মলের মধ্যে কী এমন গোপন শক্তি রয়েছে যে-এতে কবিতাপাঠ-অভিজ্ঞতার পরেও কুলকিনারা খুঁজে-পাওয়াটা মুশকিল হয়ে ওঠে? কখনও মনে হয়, তারও বুঝি রয়েছে অন্যরকম গুহ্য সহাজিয়া সাধনা।
তবে এটুকু ভাবা যায় যে— তার আছে অনুভবের এক আলাহিদা ভুবন, যেখানে তার শব্দগুলো অন্যের অনুভব-অভিজ্ঞতার স্মৃতি যতটা-না মনে করিয়ে দেয়, তার চেয়ে বেশি মনে করিয়ে দেয় তার নিজের অনুভবের কথা। এই অনুভব আবার অপরকে ছুঁয়ে-ছুঁয়ে শেষপর্যন্ত স্পর্শবন্দি করে ফেলবার কিমত রাখে।... সুনীলের ‘সাদাপৃষ্টা তোমার সঙ্গে’ কবিতাগ্রন্থের ‘শিল্প-সমালোচক কবিতায়’ দু-তিন বছরের এত্তটুকুন মেয়েটি প্রত্যেকটি বস্তুকে সে তার নিজ-নিজ নাম দেয়; একদিন সে, তার মা মা বলে উঠতেই পাশের ফ্ল্যাটের লোকটি তাকে যখন বলল, কোথায় তোমার মা? সে মোনালিসার ছবির দিকে হাত তুলে জবাব দিয়েছিল ঐ যে। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অমর সৃষ্টি এই মোনালিসা যে মেয়েটির মা নয়, এমন সত্য কথাটি বলে কেউ কি তাঁকে অভিযুক্ত করবে? নির্মলের অনুভবমোড়ানো ভাবনাগুলোও যে হুবহু এরকম, তা নয়। তার ভাবনার নজির পাওয়া যাচ্ছে এভাবে- সম্পৃক্ত শব্দে একটা আঁশটে গন্ধ লেগে থাকে, সম্পৃক্ত শব্দে আসক্তিও এসে যায়, মগ্ন শব্দে এক স্নিগ্ধতা আছে, আমার মনে হয় বা, এক প্রেমিকের অসুখে প্রেমিকার শুশ্রূষা দেখতে পাই। হাসপাতালে সিস্টারের সেবা দেখি অথবা, পৃথিবী বললে গ্লোবটাকে দেখি, মানচিত্র দেখতে পাই। ধরণী বললে মা-ভূমির এক শান্ত গ্রামবাংলার নিসর্গ আমার কাছে দেখা দেয়। নির্মলের এই শব্দ-ভাবনা ব্যুৎপত্তিজনিত না অনুভবজনিত? এমন প্রশ্ন তুলে কেউ যদি তাকে আক্রমণ করেন তাতে তার নিরজর কতটা ভাবনা হবে জানি না— কেননা কখনো তার এমনও তো ভাবতে ইচ্ছে করে যে-ভুল উচ্চারণ করেও আমি যদি আমার বক্তব্য বুঝাতে পারি, তা হলে ক্ষতিই বা কি ভুল উচ্চারণে... তবে, আমাদের উচ্চারণ তো শুদ্ধ হওয়াই উচিত, তা না হলে ভাবপ্রকাশে কতটা ক্ষতি হবে জানি না, কিন্তু তাতে তো যথেষ্ট নৈরাজ্য সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা- এ বোধ আশা করি নির্মলেরও আছে। তারপরও এমন উক্তি কেন করা হয়? তা হয়ত এ জন্য যে-আমরা সহজেই ভুলে যাই ভাষাটা আদতে অনুভবেরই দ্যোতক-আমরা অনায়াসে পাণ্ডিত্য জাহির করতে গিয়ে উপলক্ষ্যটাকেই লক্ষ্য করে এ- রকম আস্ফালন শুরু করি যে তার মধ্যে একটি হাস্যকর মিথ্যে গরিমার প্রকাশ ঘটাতে থাকি। নির্মলের ‘দহন’ কবিতায় আছে আর আমার মনে হলো, তুমিও আমাকে পুড়াবে না/দগ্ধ করবে শুধু... এ স্থানে আমাদের ঐতিহ্যনিষ্ঠ জ্ঞানতো বলে, কাউকে দগ্ধ করলে বুঝে নিতে হবে তার আগে পোড়ানোর একটা অনুঘটনা ঘটেছে। নির্মলের এই কবিতাটি পাঠ করতে গিয়ে আমাদের আদিপঠন কি আদিজ্ঞানের কোনও অভিজ্ঞতা কাজে লাগল কি? নির্মল তার একটির পর একটি কবিতাবইয়ে এভাবে নানা রকম অস্বস্তির ফুল-কণ্টক ছড়িয়ে রাখেন আমাদের জন্যে। তার শ্রেষ্ঠ কবিতা জানুয়ারি ২০০০-এ বের হলো দে’জ থেকে- সেখানে সংকলিত হলো ১৩টি কবিতাবই; এরপর আদম থেকে ২০০১ এ পাতারা কাঁপে, তার পরে আরো কিছু বেরুল কি-না জানি না-তবে, শেষ বইটিও সংশয়— কাটাবার পক্ষে যথেষ্ট- এখানেও সভ্যতা-অসভ্যতা, স্বস্তি-অস্বস্তির নানা উপাদান, আছে দ্বৈধও; ওই বইটি থেকে একটি ধাঁধাপ্রকারের কবিতা তুলে নিচ্ছি, যেখান থেকে আমরা পাঠ করে বুঝে নেব, নির্মলের কবিতা যে সমালোচনা করে চলে, অস্বস্তি জাগায়-এখানে, তার কবিতাও সে রকম কোনও সুযোগ নিল কি না, নাকি শেষ দুটি পঙতিতে এসে আবারও সেই সমালোচনা :
বাসনা
(সুব্রত সোমেন ও অতনুর জন্য)
তুমি গান করছো
আর আমি গানকে ছোঁয়ার নামে
তোমাকে জড়িয়ে ধরছি।
তুমি জানো, গানকে ছোঁয়া যায় না।
তুমি কি জানো, গানকে ছোঁয়ার নামে
তোমাকে আলিঙ্গন করছি?
২.
তুমি অসভ্য বলবে না বলেই
তোমাকে জড়িয়ে ধরি
তুমি জানো, অসভ্য মানুষেরই ক্ষুধাতৃষ্ণা থাকে
তুমি জানো, সভ্যতা শেখায়
ক্ষুধাকে আড়াল করতে?
৩.
আমার বাসনা থেকে তুই, তুই আমার কে?
রক্ত তুই, আবহমান
Subscribe to:
Posts (Atom)